‘‘বাংলাদেশে ১৬ কোটি মানুষের চার কোটি পরিবার আছে৷ এর মধ্যে নিম্নবিত্ত ২০ ভাগ আর উচ্চবিত্ত ২০ ভাগ৷ মাঝের যে ৬০ ভাগ এরা নিম্ন, মধ্য ও উচ্চ মধ্যবিত্ত৷ এই সংখ্যা আড়াই কোটি পরিবার হবে৷ এর মধ্যে সরকারি চাকুরীজীবী, মাল্টি-ন্যাশনাল ও বড় কোম্পানিতে কাজ করা কিছু মানুষ বাদে অন্যরা সবাই সংকটে আছেন৷ এদের মধ্যে বড় একটা অংশ চাকুরী ঝুঁকিতে আছেন৷ অনেকেরই বেতন হয়নি, অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে৷ ফলে তারা বেতন তো পাননি, উল্টো চাকুরী ঝুঁকিতে আছেন৷ এই মানুষগুলো সরকারি কোন কর্মসূচির মধ্যেও নেই৷ তবে সরকার এস-এমই ঋণ দিয়ে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্তদের বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছে৷ তবে এই সংখ্যাও খুব বেশি না৷ বিপুল জনগোষ্ঠী এখনও সহায়তার বাইরে৷’’
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মরতদের অনেকে বেতন পাচ্ছেন না৷ সঞ্চিত অর্থ শেষের পথে, আছেন চাকুরী হারানোর শঙ্কায়৷ সরকারের কোন প্রণোদনার মধ্যেও নেই তারা৷ ফলে চলমান লক-ডাউনের মধ্যে মহাসংকটে পড়েছেন বাংলাদেশে ‘গৃহবন্দি’ কয়েক কোটি মধ্যবিত্ত৷ অর্থনীতিবিদরা মনে করেন এইসব পরিবারের অনেকেই এখন নিম্নবিত্তের স্তরে নেমে আসছেন৷
সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে মধ্যবিত্ত
এমন পরিস্থিতিতে কিভাবে চলছেন দেশের কয়েক কোটি মধ্যবিত্ত? পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘‘মধ্যবিত্তের কিছু সঞ্চয় থাকে৷ গেল এক মাসের লক-ডাউনে তারা সেই সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে৷ এভাবে আরেকমাস চললে তাদের সেই সঞ্চয়ও শেষ হয়ে যাবে৷ তখন কি পরিস্থিতি দাঁড়াবে? বিপুল সংখ্যক মধ্যবিত্ত এই পরিস্থিতিতে নিম্নবিত্তে পরিণত হবেন৷ সবচেয়ে বড় সংকট হবে যখন সবকিছু স্বাভাবিক হবে তখন তো বিপুল সংখ্যক মানুষ চাকুরী হারাবেন৷ উন্নত দেশে তো বেকার ভাতা দেওয়া হয়৷ এখানে সেই ব্যবস্থা নেই৷ তাহলে এই মধ্যবিত্ত বেকার শ্রেণী কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? সরকারের যে প্রণোদনা সেখানেও কিছু মধ্যবিত্তের কোন অবস্থান নেই৷ আবার আমাদের যে ব্যবস্থা সেখানে সরকার চাইলেও মধ্যবিত্তকে কিছু করতে পারে না৷ আসলেই বাংলাদেশে মধ্যবিত্তরা ভয়াবহ সংকটে আছেন৷’’
শুধু তাই নয় এই কঠিন পরিস্থিতি শেষ হওয়ার পর চাকরিজীবীদের চাকরি থাকবে কি না তা নিয়ে অনেকেই আছেন চাকরি হারানোর এমন আতঙ্কে৷